শিরোনাম

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

Responsive Advertisement

ধারাবাহিক : মিসওয়াকের মহা বিস্ময়কর রুপ (পর্ব-০২)

মিসওয়াক সম্পর্কে হাদিসের বাণী
হযরত আবু মুসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একদা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট এসে দেখলাম, তিনি তাঁর হস্তস্থিত মিসওয়াক দিয়ে দাঁত মাজছেন। তিনি মুখে মিসওয়াক রেখে এরুপে ওয়াক ওয়াক করছিলেন, মনে হয়েছিল যেন বমি করবেন। (বোখারী শরীফ- হাদিস নং ১৭৪)।
হযরত হুযাইফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, (নিশ্চয়ই) নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাতে যখন ঘুম থেকে উঠতেন, তখন মিসওয়াক দিয়ে দাঁত (ও পবিত্র মুখ) পরিষ্কার করতেন। (বোখারী শরীফ- হাদিস নং ১৭৫, রিয়াদুস সালেহীন-হাদিস নং ১১৯৭, মিশকাত শরীফ, মুসলিম শরীফ-হাদিস নং ৩৪১, ইব্ন মাজাহ, নাসাঈ, আবু দাউদ শরীফ- হাদিস নং ৫৫)।
হযরত ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমি নিদ্রা অবস্থায় দেখলাম, আমি একটি মিসওয়াক দিয়ে দাঁতন করছি। এমন সময় আমার নিকট দুজন লোক আসল, একজন অপরজন অপেক্ষা বড়। আমি তাদের মধ্যে ছোট জনকে মিসওয়াক দিতে গেলাম কিন্তু আমাকে বলা হল, বড়জনকে দিন। তদানুযায়ী আমি তাদের বড়জনকে দিলাম। (বোখারী শরীফ-হাদিস নং ১৭৬, মিশকাত শরীফ-হাদিস নং ৩৫৫)।
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমি যদি আমার উম্মতের জন্য (অথবা লোকদের জন্য) কঠিন (কষ্টকর) মনে না করতাম তবে প্রত্যেক নামাযের ওয়াক্তেই (আবশ্যকীয় হিসাবে) মিসওয়াক করার হুকুম দিতাম। (মিশকাত শরীফ এবং আবু দাউদ শরীফ এ ‘ইশার নামায পিছাইয়া পড়িতে’ অংশ যুক্ত আছে)। (বোখারী শরীফ- হাদিস নং ৫৪৩, রিয়াদুস সালেহীন-হাদিস নং ১১৯৬, মিশকাত শরীফ হাদিস নং ৩৪৭, মুসলিম শরীফ-হাদিস নং ৩৫৫, হাদিস শরীফ- (২য় খন্ড), আবু দাউদ শরীফ-হাদিস নং ৪৬, তিরমিযি শরীফ- হাদিস নং ২২, সুনানু ইবনে মাজাহ- হাদিস নং ২৮৭)।
হযরত হুযাইফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাতে যখন তাহাজ্জুদ নামাযের জন্য জাগতেন, তখন মিসওয়াক দ্বারা (নিজের) দাঁত পরিষ্কার করতেন। (বোখারী শরীফ- হাদিস নং ৬৬৫, মিশকাত শরীফ হাদিস নং ৩৪৯, মুসলিম শরীফ-হাদিস নং ৩৩৯, সুনানু ইবনে মাজাহ- হাদিস নং ২৮৬)।
ইব্রাহিম ইবনে মুসা, যায়িদ ইবনে খালিদ আল্ যুহনী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি, যদি আমি আমার উম্মতের জন্য কষ্টকর মনে না করতাম, তবে তাদেরকে প্রত্যেক নামাযের সময় মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম। (‘রাত্রে এক তৃতীয়াংশ সময় পর্যন্ত ঈশার সালাত পিছিয়ে নিতাম’ অংশটুকু যুক্ত আছে)।
আবু সালমা (রহঃ) বলেন, অতপর আমি যায়িদ (রাঃ) কে মসজিদে এমত অবস্থায় বসতে দেখেছি যে, মিসওয়াক ছিল তার কানের ঐ স্থানে যেখানে সাধারণত লেখকের কলম থাকে। অতপর যখনই তিনি নামাযের জন্য দাড়াতেন মিসওয়াক করে নিতেন। (আবু দাউদ শরীফ-হাদিস নং ৪৭, তিরমিযি শরীফ- হাদিস নং ২৩, মিশকাত শরীফ-হাদিস নং ৩৬০)।
মুহাম্মাদ ইবনে বাশ্শার, আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিসওয়াক করে তা ধোয়ার জন্য আমাকে দিতেন। আমি প্রথমে তা দ্বারা মিসওয়াক করে নিতাম (বরকত হাসিলের জন্য), এরপর ধুয়ে তাকে দিতাম (সংরক্ষণ করার জন্য)’। (আবু দাউদ-হাদিস নং ৫২, মিশকাত শরীফ- হাদিস নং ৩৫৪)।
মুসা ইবনে ইসমাঈল, আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ব্যবহারের জন্য ওজুর পানি ও মিসওয়াক রাখা হত। অতপর রাতে ঘুম থেকে উঠার পর তিনি প্রথমে প্রস্রাব পায়খানা করতেন, পরে মিসওয়াক করতেন। (আবু দাউদ শরীফ- হাদিস নং ৫৬)।
হযরত কাতাদাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাতের বেলা ঘুমানোর উদ্দেশ্য বিছানায় গিয়ে তার ওজুর পানি, মিসওয়াক ও চিরুনী একপাশে রেখে দিতেন। অতপর মহান আল্লাহ যখন তাকে রাতের বেলা ঘুম থেকে জাগাতেন, তখন তিনি মিসওয়াক করতেন, ওজু করতেন এবং মাথায় চিরুনী করতেন। (আখলাকুন নবী সাঃ, ই. ফা. বা, হাদিস নং ৫০৭)।
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওজুর শুরুতে সব সময় মিসওয়াক করতেন। মিসওয়াক না থাকলে আঙ্গুল ব্যবহার করতেন। (আল হিদায়া, ই. ফা. বা. বঙ্গা. জানু-৯৮, ১ম খন্ড পৃষ্ঠা নং ০৬)।
হযরত মুয়াজ (রাঃ), রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, যায়তুন গাছের মিসওয়াক কতইনা উত্তম! এটা হচ্ছে পবিত্র বৃক্ষের অংশ যা মুখকে দূর্গন্ধমুক্ত ও মুখের ক্ষত দূর করে। এটা হচ্ছে আমার মিসওয়াক ও আমার পূর্ববর্তী নবীদের মিসওয়াক। (কানযুল উম্মাল তাবারানীর বরাতে, সূত্র ঃ হাদিসে নূর ও আধুনিক বিজ্ঞান, পৃষ্ঠা নং ৪০)।
হুমায়দ ইবনে মাসআদাহ ও মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল আলা (রহঃ), আয়িশা (রাঃ) কর্র্তৃক বর্ণিত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে, মিসওয়াক মুখের পবিত্রতা অর্জনের উপকরণ ও আল্লাহর সন্তোষ লাভের উপায়। (রিয়াদুস সালেহীন-হাদিস নং ১২০২, নাসাঈ, ইবনে খুযাইমা, মিশকাত শরীফ-হাদিস নং ৩৫১, শাফেয়ী, আহমদ, দারেমী, হাদিস শরীফ ২য় খন্ড)।
উসমান ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আবু শায়ক (রহঃ) , আয়িশা (রাঃ), রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত করেন, ‘সাওম (রোজা) কারীর উত্তম গুণাবলী হল মিসওয়াক করা। (ইবনে মাজাহ)।
হযরত আনাস (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘আমি তোমাদেরকে বেশি বেশি মিসওয়াক করার তাগিদ দিচ্ছি। / মিসওয়াক সম্পর্কে বেশি বললাম (এর গুরুত্বের কারনে) / মিসওয়াক করতে বহুবার বলেছি’। (রিয়াদুস সালেহীন-হাদিস নং ১১৯৯, বোখারী শরীফ, মিশকাত শরীফ-হাদিস নং ৩৫৭)।
হযরত ওয়াতেলা বিন আসকা থেকে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, মিসওয়াকের ব্যাপারে আমাকে এতো অধিক তাগিদ করা হয়েছে যে, আমার আশংকা হচ্ছিল, এটা আমার উপর ফরয করা হবে। (মিশকাত শরীফ)।
তাবেয়ী হযরত শারাহ বিন হানী বর্ণনা করেন, আমি হযরত আয়িশা (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গৃহে প্রবেশ করে সর্ব প্রথম কোন কাজ করতেন? তিনি উত্তর দিলেন, মিসওয়াক করতেন। (রিয়াদুস সালেহীন-হাদিস নং ১২০০, মিশকাত শরীফ-হাদিস নং ৩৪৮, মুসলিম শরীফ-হাদিস নং ৩৩৬, আবু দাউদ শরীফ- হাদিস নং ৫১, সুনানু ইবনে মাজাহ- হাদিস নং ২৯০)।
হযরত আয়িশা সিদ্দিকা (রাঃ) বলেন, আমরা নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্য মিসওয়াক ও ওজুর পানির ব্যবস্থা করে রাখতাম রাত্রে যখন আল্লাহ পাকের ইচ্ছা হতো তিনি ঘুম থেকে উঠতেন। অতপর মিসওয়াক সহকারে ওজু করে নামায পড়তেন। (রিয়াদুস সালেহীন-হাদিস নং ১১৯৮, মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)।
হযরত আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, (যে) নামাজ মিসওয়াক সহকারে আদায় করা হয় তার ফজিলত, মিসওয়াক বিহীন আদায়কৃত নামাযের তুলনায় সত্তর গুণ বেশি। (মিশকাত শরীফ-হাদিস নং ৩৫৯, আহমাদ, বায়হাকী)।
অন্যত্র বর্ণিত আছে, সত্তরগুণ উত্তম ও অধিক সওয়াবের অধিকারী। (হাদিস শরীফ, তিরমিযি, মিশকাত)।
হযরত আবু মুসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে গেলাম তখন তিনি মিসওয়াকের কিনারা দাঁতে লাগিয়ে রেখেছিলেন। (বোখারী শরীফ, রিয়াদুস সালেহীন (৩য় খন্ড) হাদিস নং ১২০১, মুসলিম শরীফ-হাদিস নং ৩৩৮)।
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘দশটি জিনিস ফিতরাতের (মানুষের স্বাভাবিক ও ভারসাম্যপূর্ণ জীবন যাপন প্রণালী) অন্তর্ভূক্ত। ১. মোঁচ (গোঁফ) কেটে ফেলা / ছাঁটা, ২. দাড়ি বড় করা, ৩. মিসওয়াক করা, ৪. নাকে পানি দেয়া / পানি দ্বারা নাসা রন্ধ্র পরিষ্কার করা, ৫. হাত পায়ের নখ কাটা, ৬. (ওজু গোসলের সময়)আঙ্গুলের জোড় এবং গিরাসমূহ ধুয়ে ফেলা, ৭. বগলের চুল কাটা / বোগলের লোম উপড়িয়ে ফেলা, ৮. নাভী মন্ডলের (যৌনকেশ) চুল কাটা, ৯. (পানির দ্বারা) ইস্তেঞ্জা করা (অর্থাৎ পেশাব পায়খানার পর পানি দিয়ে পবিত্রতা হাসিল করা)। বর্ণনাকারী বলেন (রাবী যাকারিয়া (রাঃ) বলেন, হযরত মুসআব (রাঃ) বলেছেন) দশমটি আমি ভুলে গেছি। সম্ভবত সেটি হবে কুলি করা। (মিশকাত শরীফ-হাদিস নং ৩৫০, রিয়াদুস সালেহীন হাদিস নং ১২০৪, মুসলিম শরীফ-হাদিস নং ৩৫০, আবু দাউদ শরীফ-হাদিস নং ৫৩, সুনানু ইবনে মাজাহ- হাদিস নং ২৯৩)।
‘হযরত আবু উমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, এমনটি কখনও হয়নি যে, জিব্রাইল আমার নিকট এসেছেন আর আমাকে মিসওয়াকের নির্দেশ দেননি। এতে আমার আশংকা হচ্ছিল যে (মিসওয়াকের কারণে) আমার মুখের অগ্রভাগ ছিলে না ফেলি / দাঁতের মাড়ি ক্ষয় করে ফেলি (আমি দাঁত উপড়ে যাওয়ার আশংকা করছি)’। (বায়হাকি, আহমদ, মিশকাত শরীফ-হাদিস নং ৩৫৬)।
হযরত আয়িশা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত। তিনি বলেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাহির থেকে এসে বাড়ীতে ঢুকেই সর্বাগ্রে মিসওয়াক করতেন। (মুসলিম শরীফ-হাদিস নং ৩৩৭)।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, একদিন তিনি আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে রাত যাপন করলে (তিনি দেখেন) আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাতের শেষ ভাগে ঘুম থেকে উঠে বাহিরে গিয়ে আসমানের দিকে তাকিয়ে সুরা আল ইমরানের এ আয়াতটি তিলাওয়াত করেন; (অর্থ) ‘আসমান জমীনের সৃষ্টি কৌশলে এবং রাত ও দিনের আবর্তনে জ্ঞানীদের জন্য রয়েছে বহু নিদর্শন। অতঃপর আপনি অনুগ্রহ করে আমাদেরকে আগুনের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন’। পর্যন্ত পড়লেন। এরপর ঘরে এসে মিসওয়াক করে, এরপর নামায পড়েন। নামায শেষে শুয়ে পড়েন। পুনরায় কিছুক্ষন পরে উঠে আসমানের দিকে তাকিয়ে এ আয়াত পাঠ করেন। এরপর ফিরে এসে মিসওয়াক করে, ওযু করে, ফযরের নামায আদায় করেন’। (মুসলিম শরীফ-হাদিস নং ৩৪২, বোখারী শরীফ, তিরমিযি, ইব্ন মাজাহ, নাসাঈ, আবু দাউদ শরীফ- হাদিস নং ৫৮)।
হযরত আবু আইয়ুব আনসারী (রাঃ) বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, চারটি বিষয় নবীগণের সুন্নতের অন্তর্গত। ১. (মন্দ কাজ হতে) লজ্জা করা, (অন্য বর্ণনায় এর স্থানে খতনা করা উল্লেখ আছে), ২. সুগন্ধি ব্যবহার করা, ৩.মিসওয়াক করা, ৪. বিবাহ করা। (তিরমিযি শরীফ, মিশকাত শরীফ-হাদিস নং ৩৫২)।
হযরত আয়িশা (রাঃ) বলেন, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখনই নিদ্রা যেতেন রাতে বা দিনে, অতপর জাগতেন, তখন ওজু করার পূর্বেই মিসওয়াক করতেন। (আহমদ, আবু দাউদ শরীফ- হাদিস নং ৫৭, মিশকাত শরীফ-হাদিস নং ৩৫৩)।
হযরত আয়িশা (রাঃ) বলেন, একবার নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিসওয়াক করছিলেন, তখন সেখানে দুই ব্যক্তি উপস্থিত ছিল যাদের এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তি হতে বড় (বয়সে বা সম্মানে)। তখন তাহার প্রতি মিসওয়াকের ফজিলত সম্পর্কে ওহী করা হল মিসওয়াক উহাদের বড়কে দিন। (আবু দাউদ-হাদিস নং ৫০, মিশকাত শরীফ-হাদিস নং ৩৫৮)।
কথিত আছে, আব্দুল্লাহ বিন মুবারক (রহঃ) এক যুদ্ধে শরিক হয়েছিলেন। সেখানে একাধারে যুদ্ধ চলছিল তবুও কাফিরদের দূর্গ জয় করা সম্ভব হচ্ছিল না। রাত্রে তিনি চিন্তিত মনে শুয়ে পড়লেন, স্বপ্নে তিনি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে ওজুর পূর্বে মিসওয়াক করতে আদিষ্ট হলেন। অতপর তিনি ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে মিসওয়াক সহ ওজু করলেন এবং সাথী মুজাহিদদেরকে এ আমল করতে আদেশ দিলেন। তারা সকলেই মিসওয়াক সহকারে ওজু করলেন। কাফির পক্ষের পাহারাদাররা মুজাহিদদের মিসওয়াক করতে দেখে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ল। ফলে তারা তাদের নেতাদেরকে বলল, আমাদের বিরুদ্ধে যারা যুদ্ধ করতে এসেছে তারা মানুষ খেকো মনে হয়। তাঁদেরকে আজ দাঁত ধার দিতে দেখেছি। এতে বুঝা যায় যে, তারা আজ আমাদেরকে জীবন্ত খেয়ে ফেলবে। আল্লাহ তা’য়ালা তাদের অন্তরে ভীতি ঢুকিয়ে দিলেন। ফলে মুসলমানদের নিকট তারা দূত পাঠালেন। অবশেষে সকলেই মুসলমান হয়ে যায়। (রাহ্বার ১৪ পৃ: - আব্দুর রহমান, সূত্র ঃ হাদীসের নূর ও আধুনিক বিজ্ঞান)।
হযরত আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। একবার আব্দুর রহমান ইবনে আবু বকর একটি মিসওয়াক নিয়ে দাঁত মাজতে মাজতে প্রবেশ করল। রাসুলুল¬াহ সাল¬াল¬াহু আলাইহি ওয়া সাল¬াম তার দিকে তাকিয়ে দেখলেন, (আয়িশা (রাঃ) বলেন) আমি তাকে বললাম, আব্দুর রহমান! মিসওয়াকটি আমাকে দাও। সে তা আমাকে দিল। আমি তা (ভেঙ্গে ফেললাম এবং) চিবিয়ে রাসুলুল¬াহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে দিলাম। তিনি তা দ্বারা আমার বুকে হেলান দিয়ে মিসওয়াক করলেন। (বোখারী শরীফ, বিশ্বনবীর জীবন কথা, পৃষ্ঠা নং ৩৬০)।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘উম্মতের জন্য আমি যদি কষ্টকর মনে না করতাম তবে প্রতিবার ওজু করার সময় তাদেরকে মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম’। (বুখারী, মুসলিম, ইব্ন খুযাইমা, সূত্র ঃ পবিত্রতা সংক্রান্ত মাসয়ালা-মাসায়েল)।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমার উম্মতের জন্য কষ্টকর না হলে প্রতি নামাযের সময় তাদেরকে ওজুর নির্দেশ দিতাম এবং প্রত্যেক ওজুর সাথে মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম। (আহমাদ)।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমার উম্মতের উপর কষ্টকর হওয়ার আশংকা না হলে তাদেরকে প্রত্যেক ওজুতেই অবশ্যই মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম’। (ইমাম মালিক, বায়হাকী ও হাকিম, সূত্র ঃ পবিত্রতা সংক্রান্ত মাসয়ালা-মাসায়েল)।
মুহাম্মদ ইব্ন আওফ ---- আব্দুল্লাহ ইব্ন আব্দুল্লাহ ইব্ন উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। মুহাম্মাদ ইব্ন ইয়াহ্ইয়া বলেন, আমি হযরত উমার (রাঃ) এর নাতিকে জিজ্ঞেস করলাম, হযরত ইব্ন উমার (রাঃ) ওজু থাকা বা না থাকা অবস্থায় প্রত্যেক নামাযের সময় কেন ওজু করেন? জবাবে তিনি একটি হাদিসের উদ্ধৃতি দেন- হযরত আসমা বিনতে যায়েদ ইব্ন খাত্তাব বর্ণনা করেছেন যে, আব্দুল্লাহ ইব্ন হানযালা ইব্ন আবু আমির তাঁর (আসমার) নিকট বলেছেন ঃ নিশ্চয়ই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ওজু থাকা বা না থাকা উভয় অবস্থাতেই প্রত্যেক নামাযের সময় ওজু করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। নবী করিম রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর তা কষ্টদায়ক হলে তাঁকে প্রত্যেক নামাযের সময় ওজু থাকা অবস্থায় শুধু মিসওয়াক করার নির্দেশ দেয়া হয়। অতপর হযরত ইব্ন উমার (রাঃ) এর প্রত্যেক নামাযের সময় ওজু করার ক্ষমতা ছিল বিধায় তিনি কোন নামাযের সময় ওজু পরিত্যাগ করতেন না। (আবু দাউদ শরীফ-হাদিস নং ৪৮)।
মুসাদ্দাদ ও সুলায়মান---- আবু বুরদা থেকে তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণিত। একদা আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর খিদমতে উপস্থিত হয়ে (যুদ্ধক্ষেত্রে যাওয়ার জন্য যানবাহন হিসাবে) উট চাইলাম। এ সময় আমি তাঁকে জিহ্বার উপর মিসওয়াক করতে দেখি। সুলায়মানের বর্ণনা মতেঃ আমি (আবু বুরদা) নবী করিম রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর খিদমতে এমন সময় হাজির হই, যখন তিনি মিসওয়াক করছিলেন। এ সময় তিনি তাঁর মিসওয়াক জিহ্বার এক পার্শ্বে রেখে আহ! আহ! বলছিলেন, অর্থাৎ যেন বমির ভাব করছিলেন। (আবু দাউদ শরীফ-হাদিস নং ৪৯)।
সুফয়ান ইবনে ওয়াকী (রহঃ) ------- ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাতে দু’-দু’ রাকআত করে (নফল) সালাত আদায় করতেন। এরপর সালাত থেকে অবসর হয়ে তিনি মিসওয়াক করতেন। (সুনানু ইবনে মাজাহ- হাদিস নং ২৮৮)।
হিশাম ইবনে আম্মার (রহঃ) ------- আবূ উমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন ঃ তোমরা মিসওয়াক কর। কেননা মিসওয়াক মুখ গহ্বর পবিত্র করে এবং পরওয়ারদিগরের সন্তুষ্টি হাসিল করে। আমার কাছে যখনই জিব্রাইল আলাইহি ওয়া সাল্লাম আসেন তখনই আমাকে মিসওয়াক করার উপদেশ দেন। এমনকি আমি আশংকা করছিলাম যে, তা আমার ও আমার উম্মতের উপর ফরয করা হবে। আমি যদি আমার উম্মতের উপর কষ্টের আশংকা না করতাম, তাহলে আমি তাদের জন্য মিসওয়াক করা ফরয করে দিতাম। আর আমি এতো বেশি মিসওয়াক করি যে, আমার মুখের সম্মুখ ভাগের দাঁতের গোড়ায় জখম হওয়ার আশংকা করছি। (সুনানু ইবনে মাজাহ- হাদিস নং ২৮৯)।
মুহাম্মদ ইবনে আবদুল আজীজ (রহঃ) ------- আলী ইবনে আবু তালিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই তোমাদের মুখ কুরআন তেলাওয়াতের রাস্তা, সুতরাং তা তোমরা মিসওয়াক দিয়ে পবিত্র কর। (সুনানে ইবনে মাজাহ- হাদিস নং ২৯১)।
ইবনে সাব্বাক (রঃ) হইতে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জুম্মা সমুহের কোন এক জুম্মায় ইরশাদ করিয়াছেন ঃ ‘হে মুসলিম সম্প্রদায় ইহা একটি দিবস, যাহাকে আল্লাহ ঈদ স্বরুপ নির্দিষ্ট করিয়াছেন। তাই তোমরা গোসল কর। আর যাহার নিকট সুগন্ধ দ্রব্য থাকে, সে উহা হইতে স্পর্শ করলে ক্ষতি নাই। মিসওয়াক ব্যবহার করা তোমাদের কর্তব্য। (মুয়াত্তা, পৃষ্ঠা নং ১১৯)।
হযরত যায়দ ইবনে খালিদ জুহানী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সালাতের জন্য যখনই ঘর থেকে বের হতেন, তখনই মিসওয়াক করে নিতেন। (আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব, তাহারাত অংশ, হাদিস নং ০৮)।
হযরত আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তাঁকে মিসওয়াক করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : বান্দা যখন মিসওয়াক করে, এরপর দাড়িয়ে সালাত আদায় করে, তখন তার পেছনে ফিরিশতা দাড়িয়ে যান এবং তার নিকট কিরআত শোনেন, অথবা ফিরিশতা তার নিকটবর্তী হন অথবা নিকটবর্তী হন শব্দের পরিবর্তে অনুরুপ শব্দ বলেছেন। এমনকি ফিরিশতা তার মুখ সে ব্যক্তির মুখের উপর রাখেন এবং তার মুখ থেকে যা কিছু বের হয় তাই ফিরিশতার পেটে পৌঁছে। কাজেই কুরআন তেলাওয়াত কালে তোমরা মুখ পরিষ্কার করে নাও। (আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব, তাহারাত অংশ, হাদিস নং ০৮)।
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মিসওয়াকবিহীন সত্তর রাকআত সালাতের চেয়ে মিসওয়াক করে দুই রাকআত সালাত আদায় করা আমার কাছে অধিক পছন্দনীয়। (আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব, তাহারাত অংশ, হাদিস নং ১৭)।

মিসওয়াক সম্পর্কে প্রচলিত জাল / দূর্বল / বাতিল / যঈফ হাদিস
তোমরা যখন রোযা রাখবে; তখন দুপুরে মিসওয়াক করবে, সন্ধায় মিসওয়াক করবে না। কারণ কোন রোযাদার ব্যক্তির দুই ঠোঁট সন্ধার সময় শুকনা থাকলে কিয়ামত দিবসে তার দুই চোখের মাঝে তা হবে নূর স্বরুপ। (এটি দূর্বল হাদিস, সূত্র ঃ যঈফ ও জাল হাদিস সিরিজ, পৃষ্ঠা নং ৩৫৭)।
‘রোযা অবস্থায় তিনি দিনের শেষ প্রহরে মিসওয়াক করতেন’। (এটি বাতিল হাদিস, সূত্র ঃ যঈফ ও জাল হাদিস সিরিজ, পৃষ্ঠা নং ৩৫৭)।
একদা আয়িশা (রাঃ) রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করেন, যার দাঁত নাই সেও দাঁতন করবে কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তাহলে কিভাবে করবে? তিনি বললেন, তার আঙ্গুল নিজ মুখে ভরে দিবে অর্থাৎ আঙ্গুল দিয়ে মাড়িতে ঘষবে। (তাবারানী, আওসাত)। হাদিসটি যঈফ (সূত্র ঃ আইনী তুহ্ফা সলাতে মুস্তফা)।
মিসওয়াক সম্পর্কে বিভিন্ন জ্ঞানীর বাণী
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত আলী (রাঃ) এর জ্ঞান সম্পর্কে নিজেই বলেছেন, ‘আমি জ্ঞানের শহর আর আলী তার প্রবেশ দ্বার’। (মিশকাত শরীফ)। তিনি কবি, সাহিত্যিক,ব্যাকরণ ও ন্যায় শাস্ত্রবিদ ছিলেন। সুতরাং মিসওয়াক সম্পর্কে তার বাণী দিয়েই প্রথম শুরু করলাম।
হযরত আলী (রাঃ) ফরমাইয়াছেন, ‘মিসওয়াক দ্বারা মানুষের মস্তিষ্ক (ইৎধরহ) শক্তিশালী হয়। (সূত্র ঃ সুন্নতে নববী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আওর জাদীদ সাইন্স, হাকীম মুহাম্মদ তারেক মাহমুদ চোগতাই)।
জনৈক এক পন্ডিত বলেছেন, ‘আমরা মিসওয়াক ত্যাগ করার পরই ডেন্টাল সার্জন এর আবির্ভাব ঘটেছে।
হাকীম আল বিরুনী বলেছেন, ‘বৃক্ষের মিসওয়াক যুগযুগ ধরে দাঁত পরিষ্কারের কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
ভারতের শিখ সম্প্রদায়ের শীর্ষ নেতা গুরু নানকের হাতে সর্বদা একটা মিসওয়াক থাকত যা দিয়ে তিনি মিসওয়াক করতেন। শিষ্যদের উদ্দেশ্য তিনি বলতেন, ‘তোমরা এই লাকড়ি (মিসওয়াক) গ্রহণ (ব্যবহার) কর; অথবা তোমাদের অসুস্থতা বরণ করতে হবে’।
কোন বিশাল মাঠে একটি গাছ থাকলে তাকে বাগান বলা যায় না। অনেকগুলো গাছ থাকলে তবেই তাকে বাগান বলা যায়। যদিও তাতে একটি একটি করেই গাছ লাগান হয়। আমরা কি পারি না এক একজন এক একটি করে গাছ লাগিয়ে আমাদের ধরণীকে সুন্দর ও বসবাস উপোযোগি করে সাজাতে?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Innovative education, Creativity, Practical and Social implications